আমরা সময়ের কথা সময়ে বলি।

Advertisement

আজ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ৪৮তম মৃত্যু বার্ষিকী

অন্যান্য, নবীনগর, বিশেষ প্রতিবেদন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর 6 September 2020 ৫৮৪

ব্রাক্ষনবাড়িয়া।।

আজ ৬ সেপ্টেম্বর। বিশ্ববিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস পাড়ের সর্বশ্রেষ্ঠ সূর্যসন্তান সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ৪৮তম মৃত্যুদিবসে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। ১৯৭২ সালের এই দিনে বিশ্ববরেণ্য সঙ্গীত সাধক মৃত্যুবরণ করেন।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে এক সঙ্গীতপরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সবদর হোসেন খাঁ ওরফে সদু খাঁও ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ। মাতার নাম সুন্দরী বেগম। তাঁর সঙ্গীতগুরু ছিলেন আগরতলা রাজদরবারের সভাসঙ্গীতজ্ঞ তানসেনের কন্যাবংশীয় ওস্তাদ কাশিম আলী খাঁ। আলাউদ্দিনের ডাক নাম ছিল ‘আলম’।বাল্যকালে অগ্রজ ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁর নিকট সঙ্গীতে তাঁর হাতেখড়ি হয়। সুরের সন্ধানে তিনি দশ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এক যাত্রাদলের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান। ওই সময় তিনি জারি, সারি, বাউল, ভাটিয়ালি, কীর্তন, পাঁচালি প্রভৃতি গানের সঙ্গে পরিচিত হন। পরে কলকাতা গিয়ে তিনি সঙ্গীতসাধক গোপালকৃষ্ণ ভট্টাচার্য ওরফে নুলো গোপালের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
আলাউদ্দিন খাঁ সরোদে বিশেষত্ব অর্জন করেন। সহজাত প্রতিভাগুণে তিনি সরোদবাদনে ‘দিরি দিরি’ সুরক্ষেপণের পরিবর্তে ‘দারা দারা’ সুরক্ষেপণ-পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। সেতারে সরোদের বাদনপ্রণালী প্রয়োগ করে সেতারবাদনেও তিনি আমূল পরিবর্তন আনেন। এভাবে তিনি সঙ্গীতজগতে এক নতুন ঘরানার প্রবর্তন করেন, যা ‘আলাউদ্দিন ঘরানা’ বা শ্রেণী ‘মাইহার ঘরানা’ নামে পরিচিতি লাভ করে।ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর নির্দেশে ও পরামর্শে কয়েকটি নতুন বাদ্যযন্ত্র উদ্ভাবিত হয়।সেগুলির মধ্যে ‘চন্দ্রসারং’ ও ‘সুরশৃঙ্গার’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি অনেক রাগ-রাগিণীও সৃষ্টি করেন, যেমন: হেমন্ত, দুর্গেশ্বরী, মেঘবাহার, প্রভাতকেলী, হেম-বেহাগ, মদন-মঞ্জরী, মোহাম্মদ (আরাধনা), মান্ঝ খাম্বাজ, ধবলশ্রী, সরস্বতী, ধনকোশ, শোভাবতী, রাজেশ্রী, চন্ডিকা, দীপিকা, মলয়া, কেদার মান্ঝ, ভুবনেশ্বরী ইত্যাদি। তিনি স্বরলিপিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন।ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘খাঁ সাহেব’ উপাধিতে ভূষিত করে। অতঃপর ভারত সরকার তাঁকে একে একে ‘সঙ্গীত নাটক আকাদেমি সম্মান’ (১৯৫২), ‘পদ্মভূষণ’ (১৯৫৮) ও ‘পদ্মবিভূষণ’ (১৯৭১); বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ‘দেশিকোত্তম’ (১৯৬১) এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ‘ডক্টর অব ল’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৫৪ সালে তিনি ভারত সরকার কর্তৃক প্রথম সঙ্গীত নাটক আকাদেমির ফেলো নির্বাচিত হন। তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমন্ত্রণে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে আমন্ত্রিত অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এসব দুর্লভ সম্মান ও খেতাব সঙ্গীতবিদ্যায় আলাউদ্দিন খাঁর অসাধারণ কীর্তি ও সাফল্যকেই সূচিত করে।ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর তালিমের গুণে তাঁর পুত্র সরোদশিল্পী ওস্তাদ আলী আকবর খান বিশ্ববিখ্যাত হয়েছেন। ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ’ ও ‘পদ্মবিভূষণ’ এবং তাঁর জামাতা সেতারশিল্পী পন্ডিত রবিশঙ্কর বিশ্বখ্যাত হয়েছেন এবং ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ’, ‘পদ্মবিভূষণ, ও ‘ভারতরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।