আমরা সময়ের কথা সময়ে বলি।

Advertisement

বর্ষার রানী কদম ফুল

বিনোদন, বিশেষ প্রতিবেদন, মুক্তমত 30 June 2021 ৬৮৫

জুটন বনিক।।
প্রকৃতিতে চলছে এখন বর্ষাকাল। বাঙ্গালীর প্রিয় ঋতুর একটি। আষাড় ও শ্রাবণ এই দুই মাসই বর্ষা ঋতু। এই বর্ষাতেই কদম গাছের শাখায় শাখায় ফুটে অজস্্র ফুল। ফুলের স্নিগ্ধ ঘ্রাণ মানুষকে মুগ্ধ করে। রিমিঝিমি বৃষ্টি আর বৃষ্টিভেজা কদম ফুল ফুলপ্রেমীদের দু’চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। কদম ফুলকে বর্ষার দূতও বলা হয়। তাইতো বৃষ্টির সাথে কদমের ভালোবাসা খুবই নিবিড়। অথচ ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে কদম ফুল। নাগরিক উঠানে কদম ফুলের ঘ্রাণ এখন অতীত।
এ ফুলের আরেক নাম হলো নীপ। কদম ফুলের সৌন্দর্যের মতো আরো কয়েকটি সুন্দর নামও রয়েছে। যেমন লালন প্রিয়, সুরভি,বৃত্তপুষ্প, মেঘাগমপ্রিয়, মুঞ্জুকেশিনী ,কর্ণপূরক, পুলকি সিন্ধুপুষ্প ইত্যাদি।
কদম ফুলটিকে পুরো একটি ফুল মনে হলেও এটি আসলে একটি ফুলের গুচ্ছ। এ ফুলের ভিতরে রয়েছে মাংসল পুষ্পাধার। এতে হলুদ রঙের পাপড়িগুলো আটকে থাকে।আমাদের দেশে কদম গাছ যেখানে-সেখানে অবহেলা-অনাদরেই বাড়ে ও বাচেঁ। এ গাছের ফল মাংসল ও টক। বাদুড় ও কাঠবিড়ালির প্রিয় খাদ্য। আবার এরাই বীজ ছড়ানোর বাহন।
কদম ফুলের সৌন্দর্য বর্ননাতীত। বৈষ্ণব সাহিত্য থেকে শুরু করে লোকগাথা, পল্লীগীতি ও রবীন্দ্র কাব্য পর্যন্ত এ ফুলের উপমা পাওয়া যায়। তাইতো বাদলা দিনের প্রথম কদম ফুল দিয়ে প্রণয় নিবেদন করেছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবি নজরুল ইসলামের কাছে মনে হয়েছে বাদলের পরী।
কদম ফুলের আদি নিবাস বাংলাদেশ, চীন, মালয় ও ভারতের উষ্ণ অঞ্চল। দীর্ঘাকৃতি, বহু শাখাবিশিষ্ট বিশাল বৃক্ষ। রূপসী তরুর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কদম। এর কান্ড সরল। অজস্্র শাখা এবং পাতা হয় ডিম্বাকৃতি। বোঁটা হয় খুবই ছোট।নিবিড় পত্রবিন্যাসের জন্য কদম হয় ছায়াঘন। শীতে কদমের পাতা ঝরে ও বসন্তে গাছে কচি পাতায় গজায়।

আয়ুর্বেদাচার্য শিককালী ভট্টচার্য তার চিরঞ্জীব বনৌষধি বই এ কদমের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার মতে কদম দুই প্রকার। যেমন ধুলিকদম. বসন্তপুষ্প,ক্রমুকপ্রসূন, সুবাস, নীপ ইত্যাদি।
আখাউড়া উপজেলা ফরেস্টার মোঃ আসাদুজ্জামান খান জানান, ফুলের বাহার যতই থাকুক কদমের দারুমূল্য তেমন নেই। এই গাছ দ্রুত বেড়ে উঠলেও এর কাঠ নরম। এই গাছের কাঠ দিয়ে দামি আসবাবপত্র হয় না। সে কারণে হালের বাণিজ্যিক বনায়ণের যুগে কদম উপেক্ষিত। তাইতো প্রকৃতিতে কমে আসছে কদমের উপস্থিতি।
আখাউড়া শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, কদম ফুল সবাই পছন্দ করে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা কদম ফুল নিয়ে খেরা করে। বৃষ্টির সাথে কদমের ভালোবাসা খুবই নিবিড়। চোখ জুড়ানো ঘন সবুজ পাতার মাঝে বৃষ্টিস্মাত কদম ফুল হৃদয় রাঙিয়ে দেয়। অথচ ক্রমান্বয়ে প্রকৃতি তেকে হারিয়ে যাচ্ছে কদম ফুল।