
রিপন চৌধূরী ।।
আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। রাষ্ট্র ভাষা ‘‘বাংলা’’ করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন বীর পুরুষের । কিন্তু যখনি ‘‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’’ কথাটি আসে তখনই সর্ব প্রথম মনে পরে রফিক, শফিক, সালাম, জব্বারদের কথা। এর কারণ বই পুস্তকে তাদেরকেই হাইলাইট করা হয়েছে এবং যখন এই মহা দিবসটি পালন করা হয় তখন অধিকাংশ অনুষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের ওই রফিক, শফিক, জব্বারদের গল্প শুনানো হয়। হ্যাঁ, তারা প্রাণ দিয়েছিল, তাদেরকে শ্রদ্ধাপূর্বক গভীর ভাবে স্মরণ করা অবশ্যই কর্তব্য, কিন্তু উদ্যোক্তাকে ভুলে গিয়ে নয়। এখন হয়তো বলবেন উনার নাম বই পুস্তকে আছে। কিন্তু একটু পরীক্ষা করলেই বাস্তবতা বুঝতে পারবেন। আপনার এলাকায় ৮-১০ টা ছেলে মেয়েকে জিজ্ঞাস করুন তো, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার প্রস্তাব কে সর্বপ্রথম রাখেন? আমি শিউর, অধিকাংশ ছেলে মেয়েই বলতে পারবে না।
পাকিস্তান স্বাধীন হয় ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট। মাত্র ছয় মাসের মাথায় করাচিতে ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ সালে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে যিনি স্পষ্ট ভাষায় দাবি তুলেন- ‘‘বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা হোক।’’ সেই মানুষটির নাম ‘‘ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত’’।
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তই সর্বপ্রথম বাংলা ভাষার দাবী তুলে ছিলেন। ধীরেন্দ্র দত্তের সেই দাবি পাকিস্তান পার্লামেন্টে প্রত্যাখ্যাত হয়, তারপরই ভাষা আন্দোলনের সূচনা ঘটে। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘‘পূর্ব পাকিস্তানের ৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষের মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাংলায় কথা বলে, তাই আমার বিবেচনায় বাংলা হওয়া উচিত রাষ্ট্রভাষা।’’ তার এই বক্তব্যকে জিন্নাহর ‘‘উর্দু হবে রাষ্ট্রভাষা’’ ঘোষণার প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ বলা যায়। তাকে ‘‘ভাষা আন্দোলনের জনক’’ বললেও ভুল হবে না।
আজ আমরা উনাকে মনেই রাখি না। অথচ পাকিস্তানের শাসকেরা কিন্তু তাঁকে মনে রেখেছিল!
ধীরেন্দ্র নাথ দত্তকে ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ পাক আর্মিরা ধরে নিয়ে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। ৮৪ বছর বয়সী মানুষটিকে হাত-পা ভেঙ্গে পঙ্গু এবং দুই চোখে কলম ঢুকিয়ে অন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ বাইরে রেখে দেয়া হয়েছিল গায়ে থুতু দেয়ার জন্য।
শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্তকে স্মরণ করছি কৃতজ্ঞচিত্তে। আপনার আত্মা পরমব্রহ্মে মিশে থাকুক।
শ্রদ্ধাঞ্জলি।।