
বিশেষ প্রতিনিধি।।
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় জামিন পেলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার দুই সাংবাদিক। সোমবার চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইবুনাল আদালত ওই দুই সাংবাদিকের জামিন মঞ্জুর করেন বিজ্ঞ বিচারক। জামিন পাওয়া দুই সাংবাদিক হলেন দৈনিক প্রথম আলো ও কালের কণ্ঠের সাবেক নবীনগর প্রতিনিধি, বর্তমানে দৈনিক বাংলা ৭১ এর বিশেষ প্রতিনিধি ও সাংস্কৃতিক সংগঠক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু এবং দৈনিক অবজারভারের নবীনগর প্রতিনিধি মিঠু সূত্রধর পলাশ।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে মামলার শুনানীতে অংশ নেয়া আইনজীবী ব্যারিষ্টার আশরাফ রহমান সাংবাদিকদের বলেন,’মামলাটি যে হয়রাণী মূলক ও মত প্রকাশের ক্ষেত্রে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী সেটি আমরা বিজ্ঞ আদালতকে যুক্তি তর্ক দিয়ে বুঝাতে সক্ষম হই। ফলে বিজ্ঞ আদালত আমাদের বক্তব্যে সন্তোষ্ট হয়ে দুই সাংবাদিকের জামিন মঞ্জুর করেন।’
আলোচিত এ মামলার শুনানীতে দুই সাংবাদিকের পক্ষে ব্যারিষ্টার আশরাফ রহমানের সাথে সহযোগীতা করেন চট্টগ্রামের আইনজীবী এডভোকেট জয়দত্ত বড়ুয়া, এডভোকেট সাইফুদ্দিন মো. খালেদ, এডভোকেট মো. ফারুখ, এডভোকেট মোহাম্মদ রিদুয়ান, এডভোকেট জুয়েল কান্তি নাথ, এডভোকেট অভিজিৎ দে, এডভোকেট স্বরূপ কান্তি নাথ প্রমুখ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ২০২০ সালের শুরুর দিকে করোনা মহামারি চলাকালে নবীনগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও নবীনগর কেন্দ্রীয় কালীবাড়ি’র সভাপতি কোটিপতি সীতানাথ সূত্রধরের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণের তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির সুনির্দিষ্ট তথ্যের আলোকে দৈনিক কালের কণ্ঠে বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক রিপোর্ট করেন সেসময় কালের কণ্ঠের নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি সিনিয়র সাংবাদিক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু।
ওইসব রিপোর্টে বলা হয়, সীতানাথ সূত্রধর নিজে কোটিপতি হওয়ার পরও দিনমজুর ও গরীবের জন্য বরাদ্দ হওয়া সরকারি ত্রাণের মাত্র ২৫০০/ (আড়াই হাজার) টাকার ওই গরীবের তালিকায় সীতানাথ সূত্রধর প্রভাব খাটিয়ে তার নিজের ছেলের বউ, ভগ্নি, ভাগ্নে, ভ্রাতুষ্পুত্রসহ বহু নিকট আত্মীয় স্বজনের নাম অন্তর্ভূক্ত করেন।
কালের কণ্ঠের ওইসব রিপোর্টের পর সীতানাথ সূত্রধরের ওই দুর্নীতির খবর সেসময় দেশের প্রভাবশালী দৈনিক প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ প্রায় সবকটি মূলধারার গণমাধ্যমেও ফলাও করে ছাপা হয়।
পত্রিকায় এসব রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর সীতানাথ সূত্রধর তখন এক সংবাদ সম্মেলন করে ওইসব রিপোর্টের সত্যতাও প্রকারন্তরে স্বীকার করে নিয়ে বলেছিলেন, ‘সে সময় তার প্রচন্ড জ্বর থাকায় ত্রাণের তালিকা চেক না করেই তিনি ওই ত্রাণের তালিকায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সেক্রেটারী হিসেবে স্বাক্ষর করেছিলেন।
পরদিন সাংবাদিক সম্মেলনের ওই সংবাদ ‘অনিয়ম স্বীকার করে অসুস্থতার দোহাই!’ শিরোনামে কালের কণ্ঠে আরও একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে সীতানাথ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে সেসময় গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপুকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকী দেন। পরে সাংবাদিক অপু বাধ্য হয়ে সীতানাথ সূত্রধরের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন।
এদিকে জাতীয় পত্রপত্রিকায় সীতানাথের ওইসব অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর দেখতে পেয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাসগুপ্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটিকে লিখিতভাবে ‘শোকজ’ করেন।
কিন্তু ওই শোকজের জবাব জেলা কমিটি কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সঠিকভাবে দিতে না পারায়, ত্রাণের তালিকায় গরীবের নামের পরিবর্তে সীতানাথ সূত্রধরের পারিবারিক আত্মীয় স্বজনের নাম অন্তর্ভূক্ত করার কারণে গোটা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অসহায় ও গরীবদের ত্রাণের পুরো তালিকাটি চরম ক্ষুব্ধ হয়ে বাতিল করে দেন রানা দাসগুপ্ত।
এতে গোটা জেলার দুই হাজারেরও বেশী কর্মহীন গরীব হিন্দু ত্রাণের টাকা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কোটিপতি সীতানাথ সূত্রধর স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় সাংবাদিক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপুর ওপর দু’দফায় হামলা করেন। হামলার পর থানায় মামলাও করেন সাংবাদিক অপু। এক পর্যায়ে সাংবাদিক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপুর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যে অভিযোগ এনে একটি পিটিশন মামলা (২৫/২৯ ধারায়) করেন সীতানাথ সূত্রধর। যা পরবর্তীতে চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইবুনালে স্থানান্তরিত হয়।
এ মামলায় দৈনিক অবজারভারের নবীনগর প্রতিনিধি সাংবাদিক মিঠু সূত্রধর পলাশকেও আসামী করা হয়।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইবুনাল আদালত থেকে সাংবাদিক গৌরাঙ্গ ও মিঠুকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওই মামলায় ‘সমন’ দেয়া হয়।
আদালতের সমন পেয়ে ওই দুই সাংবাদিক গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইবুনালে আত্মসমর্পণ করলে বিজ্ঞ আদালতে মামলাটির শুনানী হয়। শুনানী শেষে সাংবাদিকদ্বয়ের জামিন মঞ্জুর করেন বিজ্ঞ বিচারক।