
ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
পাগল ডাকায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সুযোগ বুঝে নিজ বাড়িতে নিয়ে ছুরি দিয়ে জবাই করে শিশু মাইনুল হাসান ওরফে আবু বক্কর (৪)কে হত্যা করে একই মহল্লার সাব্বির (২০)। শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (৪র্থ) আদালতের বিচারক সাখাওয়াত হোসেনের কাছে ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন সন্দেহভাজন হিসেবে আটক হওয়া সাব্বির। সাব্বির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কান্দিপাড়ার মাইমল হাটির মৃত মফিজ মিয়ার ছেলে। সে শহরের বিভিন্ন বাজারে মাছ কেটে আয় রোজগার করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহরাব আল হোসাইন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সোহরাব আল হোসাইন জানান, সাব্বির ও মাইনুল হাসান ওরফে আবু বক্কর একই এলাকার বাসিন্দা। সাব্বির ছোট আবু বক্করকে প্রায় সময় ডেকে আব্বা ডাকতে বলতেন। কিন্তু শিশু আবু বক্কর প্রায় সময় সাব্বিরকে পাগল ডাকত। প্রায় এক মাস আগে, শিশু আবু বক্কর ঢিল দিলে মাথায় আঘাত পান সাব্বির। এরপরই মূলত আবু বক্করকে হত্যার পরিকল্পনা করে সাব্বির। শুক্রবার রাতে সবার অগোচরে ফুসলিয়ে শিশু আবু বক্করকে সাব্বির তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সাব্বির তার বড় ভাইয়ের কক্ষে মেঝেতে ফেলে বাম হাত দিয়ে মুখ এবং হাটু দিয়ে শরীর চেপে ধরে ছুরি দিয়ে শিশু আবু বক্করকে জবাই করে হত্যা করে। এরপর সে বাড়ি থেকে বের হয়ে ড্রেনে পড়ে থাকা একটি বস্তায় ঢুকিয়ে আবু বক্করের লাশ পাশের বাড়ির টিউবওয়েলের কাছে ফেলে দিয়ে আসে। তিনি আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের পর প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে সাব্বিরকে আটক করা হয়। পরে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। এই ঘটনায় আবু বক্করের বাবা হাসান মিয়া বাদি হয়ে সাব্বিরসহ ৯ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এর আগে গত শুক্রবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়ার মাইমল হাটি মহল্লা থেকে শিশু মাইনুল হাসান ওরফে আবু বক্করের (৪) বস্তাবন্দি গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় শহরের কান্দিপাড়া এলাকায় এই নির্মম ঘটনা ঘটে। নিহত আবু বকর শহরের কান্দিপাড়া এলাকার হাসান মোল্লার ছেলে।
স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আবু বকর সন্ধ্যা ৭টা থেকে নিঁখোজ রয়েছে। তারপর থেকে পরিবার ও স্বজনরা পুরো কান্দিপাড়া ও তিতাস নদীর পাড় এলাকা খোঁজাখুঁজি করলে একপর্যায়ে কান্দিপাড়া এলাকার একটি টিউবওয়েলের সামনে থেকে বস্তাবন্দি গলাকাটা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরিফুজ্জামান হিমেল শিশুটির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।মাইনুলের চাচা মাহমুদ মিয়া জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে আবু বক্কর আমাকে একটি ব্রাজিলের জার্সি কিনে দিতে বলে। আমি আমার ভাগ্নেকে ডেকে টাকা দিয়ে দুজনের জন্য দুইটি জার্সি কিনে আনতে বলি। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই আমাকে জানালেন আবু বক্করকে খুঁজে যাচ্ছে না। পরে আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করতে থাকি। পরে খবর পাই টিউবওয়েলের কাছে বস্তাবন্দী মরদেহ পড়ে আছে।এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন রেজা বলেন, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে আটকের পর ঘটনার রহস্য উন্মোচন হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।